1162
Atrayee Bhowmick

ঝি মেয়েটার গল্প 

পাড়ার ঠিকে ঝিটাও প্রেম করে।দেওয়াল রঙ করে যে রঙ মিস্ত্রিটা ওর সাথে ওর প্রেম।আগের বছর লম্পট বরটা কারসাথে পালিয়ে গিয়েছিল।অনেক সাধ্যসাধনা করে ফিরিয়ে আনতে হয়েছিল।দশ বছরের বিয়ে ওদের।খেতে দেওয়া আর মশারি খাটানো ছাড়া তেমন মুখ দেখার সুযোগ নেই।টালির চাল দেওয়া বস্তির ঘরে সতেরো বছরের কিশোরী দেখতে দেখতে কেমন যুবতী হয়ে গেল।কেউ খোঁজ নেয়নি।পাশের পাড়ার কেষ্টটা সারা পাড়ার দেওয়াল গুলো রঙিন আঁকিবুকিতে ভরিয়ে রাখে।ঝি ভাবে কোনদিন দেওয়াল জুড়ে ওরনাম লিখে দেবে কেষ্টা।সেইদিন পুরনো সুটকেসে টিপের পাতা,ভাঙা আয়না খানা আর খানচারেক রঙচটা শাড়ি ঢুকিয়ে বেড়িয়ে পরবে কেষ্টার হাত ধরে। ঘরের দেওয়াল গুলো যেন গিলে খেতে আসে ওকে।সাতাশ বছরের যৌবন গুমরে মরে মাটির দেওয়ালের নিচে।এক ওই কেষ্টটাই ঝোড়ো হাওয়ার মতো কেমন সব উল্টে পাল্টে দেয়।কোঁকড়ানো একমাথা অবাধ্য চুল,মেঘলা আকাশের মতো ধূসর চোখ,হাল্কা বাদামি রঙের পেটানো গড়ন।স্নানের সময় রোজ পুকুরপাড়ে ঝুড়িনামা বটগাছটার তলায় বসে খৈনি ডলে।কেমন জানি চোখগুলো।কি জানো গভীর সর্বনাশের ইঙ্গিত দেয়।মন বলে ঘুনধরা সংসার থাকুক পড়ে,ওই একটা লোকের হাতধরে অনেক দূর চলে যাওয়া যায়।পেছনে পড়ে থাক দশবছরের মাকড়সা ধরা দাম্পত্য,কচি কচি ঘাস গজানো ফুটবল খেলার মাঠটা,লক্ষ্মীর ঝাঁপিতে যত্নে লুকানো দশটাকার নোটগুলো,আগের বর্ষায় পড়ে যাওয়া দুধি গাইয়ের ভাঙা গোয়ালটা,বদরাগী বরটার প্রথম দেওয়া লাল ডুরে শাড়িটা আর সতেরো বছরের কিশোরী মনটা।কি জানি ও চলে যেতে পেরেছিল কিনা।আর খোঁজ নেওয়া হয়নি।আমি খুব চেয়েছিলাম ও চলে যাক,ভালোবাসার লোকটার সাথে পালিয়ে বাচুঁক।একসাথে হাতধরে সাইবেরিয়ার বরফ দেখুক,খুবভোরে উঠে দুধসাদা পায়রার মতো তাজমহল দেখুক,নুনে ভরা কচ্ছের রাণে নীলগাই দেখুক,অ্যারিজোনার মরুভূমিতে তারাভরা আকাশের নীচে শুয়ে ভালোবাসা দেখুক।কি জানি ওদের দেখা হয়েছিলো কিনা।আর খোঁজ নেওয়া হয়নি।

Related Articles