805
Dipika Mondal

ত্রিধা

ত্রিধা 
পর্ব ১: 

'ভালোবাসা কথা টা কে যদি বিভক্ত করা যায়, "ভালো" আর "বাসা"। অর্থ দাড়ালো, সুন্দর  একটা বাসা ,যেখানে  আমরা  খুব  সুখে  বাস  করতে  পারি ।।
মানে  যে  বাড়ির  আঙিনায়  পায়রা  রা  সাছন্দে  খেলে  যেতে  পারবে  মুহূর্তের  পর  মুহূর্ত ।।যেখানে  রাত্রের  আন্ধকারে চোখ  টা  বন্ধ  করার  সময়  মুখে  লেগে  থাকবে  একটা  আবেশাছন্ন   মৃদু  হাসি ।'
এইসব  কথাগুলো  খাতার পাতায়  আঁকতে  আঁকতে  কখন  ঘুমিয়ে  পড়েছিল  ত্রিধা।
বড্ডো  ভাবুক  মেয়ে  সে । কত  কি  যে  ভাবে--নাম  না  জানা  পাহাড়ের  কথা ।।অবিভক্ত  নদীর  কথা । এইসবের জন্য বারবার  বন্ধুদের কাছে  হাসির  পাত্র  হত  ছেলেবেলায়।এখন  তো  ও  অনেক  মার্জিত । এই  হাবিজাবি  লেখা  টা  সে  বন্ধ  রেখেছে  অনেকদিন । মাথার  মধ্যে  কথা  রা  আসে ,কিল  বিল  করে  ঘুরে  আবার  লুকিয়ে  পরে । 
আজ  অনেকটা  কাল  বাদে  কাগজ - কালির  হল মিতালি  তার  হাতে , কেন  হল ? 
সেই  যে  ছেলেটা  একটা  অবাক  চোখে  তাকিয়ে  থাকে, সেই  কি  কারণ ? এই  তো  সেদিনের  কথা , অ্যালার্ম  এ  ঘুম  না  ভাঙ্গায়  ১৫  মিনিটে তৈরি  হয়ে  অফিস  বেরোলো ,তার  অবিন্যস্ত  কোঁকড়ানো  চুলেরা  ঘোরা  ফেরা  করছিলো  মুখমণ্ডলে। সেদিনও  দেখছিলো !
এক  মাস  ধরে  এটা চলছে ,রোজ  এক ই  সময়ে  ত্রিধার  ফ্লোরে লিফ্টের  বাইরে  দাঁড়িয়ে  থাকে ,না কোনো  বাক্য  বিনিময়  হয়নি , নামও আজানা । কিন্তু  কেমন  যেন  আকর্ষণ  বোধ  করতে শুরু করেছে  ত্রিধা  ছেলেটার  উপর ! ওর  কথা  ভাবতে  ভাবতেই  এই  লেখা ! কি  হল  ত্রিধার ?!
সে  কি  প্রেমাসক্ত ! আয়নার  সামনে  দাঁড়িয়ে  এটাই  প্রশ্ন  করছে  নিজেকে !  সদুত্তর  তো  আসছেনা ! এক  মাস  ধরে  কয়েক  মূহুর্ত্তের  দেখায়  ভালোবাসা ! এ  কি  আজে  বাজে  ভাবছে  সে ।
যাইহোক ! ভাবার  সময়  ছিলনা  বেশি , অফিস  র  জন্য  তৈরি  হতে  হবে । 

ত্রিধা
পর্ব ২:
অফিস এ ঢুকতেই বিতানের আওয়াজ, "কার তরে এই সাজ সখি"। মুখ বেকিয়ে কাজে মন দিলো ত্রিধা। আজ হঠাৎ একটু সাজতে ইচ্ছে জেগেছিলো,চারদিকে সবাই সেজে গুজে পোস্ট দিচ্ছে ফেসবুকে(১৪ ই ফেব্রুয়ারী উপলক্ষে) । তেমন কিছু না অবশ্য, একটা ময়ূরকন্ঠী রঙের চুড়িদার আর ছোট্ট টিপ্ কপালে।এমনিতে ও এসব পরেনা বিশেষ। আজ খেয়াল হলো, তাই পড়লো।
ও বলা হয়নি, ত্রিধা অসামান্য সুন্দরী না হলেও তার হাসিটা মোহময়ী, ঘর বেঁকিয়ে দুটো হাসি দিলে সামনের ছেলের হার্ট বীট বাড়বেই। চুল সে সবসময় খুলেই রাখে,তার মতে চুল বাঁধার না,খোলার জিনিস। মা সারাক্ষন বকাবকি করে ভিডিও কলে, "কেন এমন পাগলী হয়ে ঘুরিস তুই ত্রি"। 
এই অফিসের বিতান ওর কলেজের বন্ধু, কাজের সূত্রে একজায়গায়। সেও সারাদিন বলতে থাকে,"তোর এই খেপাপাগল রূপের জন্য তোর বয়ফ্রেইন্ড নেই,সময় থাকতে শুধরে যা, নাতো চুল পাকা বুড়ির আর বিয়ে হবেনা।"
তখন মুখ বেঁকিয়ে কাটিয়ে দিলেও ত্রিধা জানতো বিতান আবার হানা দেবে,ঠিক তাই হলো, "কিরে তোরও বয়ফ্রেইন্ড হচ্ছে আজকাল।হে প্রভু কি দিন দেখালে!" বলেই পাশে বসলো শয়তানটা।
আজ হঠাৎ করে ত্রিধার গালে যেন গোলাপি আভা। শেষ পর্যন্ত বললো আজান ছেলেটার গল্প। বিতান তো হেসেই লুটোপুটি, "এতদিন বন্ধুদের জন্য মেয়ের নম্বর জোগাড় করেছি, এবার তোর জন্য ছেলের নম্বর আনতে হবে, নাতো তুই স্মশানবাসিনী হবি রে,তখন আমার জন্য টিফিন বানিয়ে কে আনবে!"
ত্রিধার প্রপোজালটা ভালোই লাগলো, "শোন্না,নেক্সট দিন অফিসে আমার সাথে ঢুকে ছেলেটাকে ফলো করবি প্লিজ!"
বিতান: "সালা তুই সিরিয়াসলি নিয়ে নিলি! যাকগে,এতদিন টিফিন খায়েছিস,তার প্রতিদান। মানডে অফিসে ঢোকার সময় একটা কল করে নিস্,আই উইল বি দেয়ার ফর ইউ"।

উইকেন্ড টা যেন শেষই হচ্ছিলোনা, কবে মানডে আসবে! এই দুদিনে সে অনেকবার নিজেকে প্রশ্ন করেছে,কি এমন হলো ওর। কেন হলো?! কিছুই তো জানেনা ছেলেটার ব্যাপারে। আর সেই ক্লাস টুয়েলভের ঘটনাটার পর কোনোদিন ভাবেনি ও কোনোদিন কোনো ছেলের সাথে রেলশনশিপে যাবে। কিন্তু এক আজানার প্রতি এই অমোঘ আকর্ষণ কেন!
সানডে সন্ধ্যেয় কফি খেতে খেতে "নোটবুক" মুভি টা আর একবার দেখলো। বিতানের একটা মেসেজ এলো, "বি রেডি ফর টুমোরো" ।

এখন শুধু কাল সকালের অপেক্ষা।

Related Articles